অন্যান্য বিষয়

তাকদীর বা ভাগ্য কি?

তাকদীরের রহস্য সাধারনতঃ দূর্বোধ্য, তাই এ বিষয়ে জানার কৌতুহল অনেকেরই থাকতে পারে। আমি এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করছি। যা কিছু আল্লাহ্ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত তাহাই তাকদীর। তাই আল্লাহ্ পাকের সমগ্র সৃষ্টিই তাকদীরের বিধান অনুযায়ী হয়েছে। এই তাকদীরের বিধান আল্লাহ্ পাকের জারীকৃত দুইটি সুস্পষ্ট বিধান দ্বারা সীমিত। তার একটি হল আল্লাহ্ পাকের এখতিয়ারাধীন সৃষ্টিগত আইন যাকে ইসলামের পরিভাষায় তাকবিনী আইন বলে। তাকবিনী বলিতে সৃষ্টিগত কাজের ধারাবাহিক নিয়ম কানুনকে বুঝায়। যেমন “কুন” বলার সঙ্গে সঙ্গে “ফাইয়াকুন” হয়েছে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হইয়াছে এবং সৃষ্টির পর তাহা নিখুঁতভাবে কেয়ামত পর্যন্ত চলিতে থাকিবে।

অপরটি হল মানুষের এখতিয়ারাধীন বাস্তব জীবন যাপনের জন্য কাজ যাকে ইসলামের পরিভাষায় তাশরিয়া আইন বলে। এইটি মানুষের ইচ্ছার স্বাতন্ত্র্য ও কর্মের স্বাধীনতার মধ্যে সীমিত। তাকদীরের বিধান অনুযায়ী তাশরিয়া কাজটি করিলে এই ফল দাঁড়াইবে, আর না করিলে এই ফল দাঁড়াইবে এইরূপ। এক্ষেত্রে যে বিজ্ঞোচিত ব্যবস্থায় কাজটি করা আর না করার ফলাফল ঝুলন্ত বা অচূড়ান্ত অবস্থায় তাকদীরে লিপিবদ্ধ থাকে সেই ব্যবস্থাকে তাকদীরে মুয়াল্লাক বলে।

আবার তাকদীরে মুয়াল্লাকে রক্ষিত কাজটির ফলাফল আদৌ ঘটিবে কি ঘটিবেনা তাহা একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া পূর্ব হইতে কেউই জানেননা। এমনকি ফেরেশতারাও তাহা জানেননা। এই চূড়ান্ত ব্যবস্থাকে তাকদীরে মুবরাম বলে। তবে তাকদীর আল্লাহ্ কর্তৃক একবার মুবরাম বা চূড়ান্ত হলে তাহা কখনও রদবদল হয়না। তাকদীরে মুয়াল্লাক এবং তাকদীরে মুবরাম উভয়ের মধ্যকার সময়ের পরিসরটিতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কতিপয় ভাগ্য বিপর্যয় উত্তরণের সুযোগ রহিয়াছে। আর কতিপয় ভাগ্য বিপর্যয় যাহা আল্লাহ্ কর্তৃক মুবরাম বা চূড়ান্ত তাহার উত্তরণ সম্ভব নয়।

যে কারনে দেখাযায়, মানুষ চেষ্টার দ্বারা অনেক সময় সফল হয়, আবার কখনো আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। যেহেতু সৃষ্টিজগতের কেউই তাকদীরে মুবরাম সম্পর্কে জানিনা সেহেতু সকল ব্যাপারে সচেষ্ট থাকাই উচিত। চরম চেষ্টা সাধনা নামে অভিহিত তদবীরই একমাত্র প্রক্রিয়া যাহা ভাগ্য বিড়ম্বিতকে সৌভাগ্যে উত্তরণ ঘটাইতে সক্ষম।

এ সম্পর্কে হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁহার এক হাদীসে বলেছেন, “তদবীরই তাকদীরের নিয়ামক।” অন্যত্র বলেছেন, “চেষ্টা সাধনা কখনও বৃথা যায়না।” পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক ঘোষনা করেন, “আল্লাহ্ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেননা যতক্ষণ না সেই জাতি নিজেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে।” পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক আরও বলেন, “মানুষ যাহা চেষ্টা করে তাহার অতিরিক্ত কিছুই তাহার প্রাপ্য নয়।”

উপরোল্লিখিত আলোচনার আলোকে বলাযায়, বস্তুতঃ কর্মের প্রভাব অনস্বীকার্য। এ কথা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। সাবধানতা, ধৈর্য্য, সংযম, নিয়মানুবর্তিতা, আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা, কর্মস্পৃহা, প্রচেষ্টা, সাহায্য গ্রহন, চিকিৎসা ইত্যাদিও তদবীরের সমার্থক যা তাকদীরে মুয়াল্লাকের বিষয়। এক্ষেত্রে দেখাযাচ্ছে ব্যক্তিই তার ভাগ্যের তথা তাকদীরে মুয়াল্লাকের নিয়ন্ত্রক থাকছেন। অনিবার্য নিয়তী বা তাকদীরে মুবরাম যাহাই থাক। আর সেজন্যই মানুষ সবসময় তার ভাগ্যকে সৌভাগ্যে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টাই করে যায়, ইহাই মানুষের ইতিহাস।